
বাংলা রিডার ডেস্ক
নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন জোহরান মামদানি। দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এই মুসলিম রাজনীতিক শহরটির সর্বোচ্চ পদে নির্বাচিত হয়েছেন, যা পুরো বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক রাজনীতির নতুন যুগের সূচনা করেছে।
৫ নভেম্বর, বুধবার আল জাজিরার একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, ৮৪ লাখের বেশি জনসংখ্যার এই শহরের মেয়র পদে আসীন হওয়া মামদানি নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম, দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এবং আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া ব্যক্তি, যিনি এই গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
৩৪ বছর বয়সী মামদানি নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য ছিলেন। মঙ্গলবার রাতে ব্রুকলিনের প্যারামাউন্ট থিয়েটারে তার বিজয় উৎসবে ভাষণ দেওয়ার কথা থাকলেও, তিনি সোমবারই সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আপনারাই আজ এই শহরে ইতিহাস রচনা করেছেন।”
নিউইয়র্কের বহুজাতিক ও বহুধর্মীয় ভোটাররা মামদানির জয়কে অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে দেখছেন। তার সমর্থকরা জানান, এটি ধর্ম বা জাতিগত পরিচয়ের পরিবর্তে, জীবনযাত্রার খরচ কমানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তার প্রচারণার জয়।
আল জাজিরা জানায়, মামদানি নির্বাচনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভবিষ্যতের দিকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছে। সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো ছিলেন প্রভাবশালী ধনী দাতাদের পক্ষে, তবে মামদানি নিজেকে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন এবং নতুন প্রজন্মের প্রগতিশীল ধারণার প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
কুয়োমো মঙ্গলবার ভোট দিতে গিয়ে মন্তব্য করেন, “এটি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অভ্যন্তরে এক ধরনের গৃহযুদ্ধ। সমাজতান্ত্রিক নেতৃত্বাধীন চরম বামপন্থিরা এখন মধ্যপন্থিদের চ্যালেঞ্জ করছে।”
ব্রঙ্কসের মোট হেভেন এলাকার সমাজকর্মী জোশুয়া উইলসন বলেন, “আমেরিকা এখন রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত। এমন সময়ে নতুন ও তরুণ কণ্ঠের উত্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
৬৮ বছর বয়সী লুসি কর্দেরো বলেন, “আমরা কুয়োমোকে দেখেছি—তিনি ভালো ছিলেন না। মামদানি নতুন, তরুণ, হয়তো তিনিই কিছু পরিবর্তন আনতে পারবেন।”
ব্রুকলিনের ক্রাউন হাইটসের ৫২ বছর বয়সী ফ্রিল্যান্সার মেগান মার্কস বলেন, “মামদানির অবস্থান আমার চেয়েও বামপন্থী, তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তার মতো নেতার প্রয়োজন ছিল। আমি তাকে সমর্থন করেছি, কারণ আমাদের হারানোর কিছু নেই।”
তবে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের দিন কুয়োমোকে সমর্থন জানিয়েছিলেন, যা রক্ষণশীল ভোটারদের একত্রিত করার চেষ্টা ছিল। তবে, তা উল্টো ফল দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
৫৫ বছর বয়সী আইনজীবী অ্যালেক্স লরেন্স বলেন, “প্রাইমারিতে আমি মামদানিকে ভোট দিইনি। তবে পরবর্তীতে তার সততা এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখে আমি তাকে সমর্থন দিয়েছি।”
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ড্রাইভার ইফতেখার খান বলেন, “মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় ভোটারদের ঐক্যই মামদানির শক্তি। ৯/১১ হামলার পর যেভাবে মুসলিমরা বৈষম্যের শিকার হয়েছিল, তার জয় আমাদের জন্য এক নতুন সূচনা।”



