নির্বাচনের পর পদ ছাড়তে চান রাষ্ট্রপতি : রয়টার্স

বাংলা রিডার ডেস্ক
আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হলেই মেয়াদ পূরণের আগেই পদত্যাগ করার পরিকল্পনা করছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন তিনি।

রয়টার্সকে রাষ্ট্রপতি জানান, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি ‘অপমানিত’ বোধ করছেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হলেও রাষ্ট্রপতির পদ মূলত আনুষ্ঠানিক; ১৭ কোটি ৩০ লাখ মানুষের মুসলিমপ্রধান দেশের নির্বাহী ক্ষমতা থাকে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার হাতে।

গত বছরের আগস্টে ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মুখে দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে পালিয়ে যান। এরপর সংসদ ভেঙে গেলে সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

৭৫ বছর বয়সী মো. সাহাবুদ্দিন ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। দলটিকে ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ঢাকার সরকারি বাসভবন থেকে হোয়াটসঅ্যাপে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি চলে যেতে আগ্রহী। আমি চলে যেতে চাই।” দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই তার প্রথম কোনও গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার।

রাষ্ট্রপতি আরও জানান, নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে তিনি দায়িত্বে থাকছেন। প্রায় সাত মাস ধরে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস তার সঙ্গে দেখা করেননি; তার প্রেস বিভাগও প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেপ্টেম্বরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো থেকেও রাষ্ট্রপতির প্রতিকৃতি সরিয়ে ফেলা হয়।

তিনি বলেন, এক রাতের মধ্যেই সব কনস্যুলেট ও দূতাবাস থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানো হয়—এতে ভুল বার্তা যায় যে হয়তো তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা তাকে অত্যন্ত অপমানিত করেছে। প্রতিকৃতি অপসারণের বিষয়ে তিনি ড. ইউনূসকে চিঠি লিখলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানান। এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর তাৎক্ষণিক সাড়া দেয়নি।

সেনাপ্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ
রাষ্ট্রপতি জানান, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে প্রাণঘাতী আন্দোলনের সময় সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ না করায় শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকা সম্ভব হয়নি। রাষ্ট্রপতির দাবি, জেনারেল জামান তাকে জানিয়েছেন যে তার ক্ষমতা দখলের কোনও ইচ্ছে নেই।

বাংলাদেশে সামরিক শাসনের ইতিহাস থাকলেও জেনারেল জামান গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পক্ষে বলেই রাষ্ট্রপতি মন্তব্য করেন। তিনি আরও জানান, আন্দোলনের শুরুতে কিছু ছাত্র তার পদত্যাগ দাবি করলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কোনও রাজনৈতিক দল এ দাবি তুলেনি।

জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী পরবর্তী সরকার গঠনে এগিয়ে রয়েছে। এই দুই দল ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা জোটের অংশ ছিল।

২০ বছর ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন কি না—প্রশ্নের উত্তরে সাহাবুদ্দিন মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর থেকেই তিনি স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই।

সূত্র: রয়টার্স

বিজ্ঞাপন

Recommended For You