ছাত্র-জনতার হত্যাকাণ্ডের দায় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর দিলেন শেখ হাসিনা

বাংলা রিডার ডেস্ক:
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ মাস পর নীরবতা ভেঙে বলেছেন, গত বছরের “বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে” নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্য ভুল প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু-কে দেওয়া এক লিখিত সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “মাঠপর্যায়ের নিরাপত্তাকর্মীরা দ্রুত পরিবর্তনশীল ও সহিংস পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিলেন। তাদের কিছু আচরণে নিঃসন্দেহে ভুল হয়েছিল। তবে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তগুলো ছিল সৎ উদ্দেশ্যপ্রসূত এবং প্রাণহানি কমানোর লক্ষ্যেই নেওয়া।”

তিনি আরও জানান, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচন আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কি না, তা নিয়ে তিনি সন্দিহান। তার ভাষায়, “নির্বাচন যদি হয়ও, তা বৈধ হবে না, কারণ আওয়ামী লীগ এখনো নিষিদ্ধ দল।”

শেখ হাসিনা দাবি করেন, তিনি কখনো নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানাননি। “আমি শুধু বলেছি, যদি আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া হয়, তাহলে লাখো সমর্থক ভোট দেবে না, কারণ তারা তাদের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে না,” বলেন তিনি।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশ ছাড়ার আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন—এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করে শেখ হাসিনা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করতে হলে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দিতে হয়। আমি কখনো এমন চিঠিতে সই করিনি, রাষ্ট্রপতিও কোনো পদত্যাগপত্র পাননি।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) তার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, “এই বিচার এক প্রহসনমূলক নাটক, যা আমার রাজনৈতিক শত্রুরা পরিচালনা করছে। রায় ঘোষণার আগেই ফল নির্ধারিত হয়ে গেছে। মৃত্যুদণ্ডের দাবি আসলে আমার দলকে ধ্বংস করারই অংশ।”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “তারা যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। তারা নির্বাচিত নয়, জনগণের কাছে কোনো দায়বদ্ধতাও নেই।”

বাংলাদেশে ফিরে না আসার কারণ হিসেবে তিনি বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করেন। তার অভিযোগ, “ইউনূস তার মন্ত্রিসভায় কিছু উগ্রপন্থিকে জায়গা দিয়েছেন, যা চরমপন্থিদের জন্য উৎসাহ ও সহায়তার বার্তা দিচ্ছে।”

পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ কখনো ১৯৭১ সালের বর্বরতা ভুলবে না। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যেতে পারে, তবে তা হতে হবে ভারসাম্যপূর্ণ ও ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতি সম্মানজনক।”

বিএনপি ও জামায়াতের ঘোষিত নতুন “জুলাই চার্টার” প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের নতুন কোনো চার্টারের প্রয়োজন নেই। এই দলিল জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন নয়, এবং আমি সন্দেহ করি এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসারে গৃহীত হবে কি না।”

বিজ্ঞাপন

Recommended For You