
বাংলা রিডার ডেস্ক
চাঁদপুর-ঢাকা নৌরুটে দ্রুতগতির লঞ্চ চালুর দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে। যাত্রীসেবার মান দীর্ঘদিন ধরে অপরিবর্তিত থাকায় এই রুটে যাত্রীসংখ্যা কমে গেছে। এমন প্রেক্ষাপটে চাঁদপুরবাসীর পক্ষ থেকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। সোমবার (২০ অক্টোবর) তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
চিঠিতে জেলা প্রশাসক উল্লেখ করেছেন, চাঁদপুর দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌ-বন্দর হিসেবে পরিচিত। পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় অবস্থিত হওয়ায় এটি একদিকে যেমন ভৌগলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও জনপ্রিয়।
বর্তমানে নদীপথে চাঁদপুর থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা, যেখানে সড়কপথে একই গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা। ফলে অনেক যাত্রী নদীপথ পরিহার করছেন।
জেলা প্রশাসকের চিঠিতে আরও বলা হয়, ধীরগতির পুরনো লঞ্চ, নিম্নমানের যাত্রীসেবা, অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অপরিচ্ছন্ন অভ্যন্তরীণ পরিবেশ যাত্রীদের নিরুৎসাহিত করছে। যদিও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আধুনিক লঞ্চ টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প চলমান রয়েছে, তবে লঞ্চগুলো আধুনিক ও দ্রুতগতিসম্পন্ন না হলে এই প্রকল্পের সুফল মিলবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চাঁদপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও দ্রুতগতির লঞ্চ চালুর দাবিতে সরব হয়েছেন।
চাঁদপুর পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক দেলোয়ার আহমেদ বলেন, “লঞ্চগুলো নিজের মতো করে চলছে, সেবার মান বাড়েনি। শীত-গরম নির্বিশেষে একরকম ভাড়া নেওয়া হলেও যাত্রীসেবায় উন্নতি নেই।”
সমাজকর্মী শিমুল হাসান বলেন, “৫০ টাকার ভাড়া এখন ৩০০ টাকা, অথচ মানসিক শান্তি বা সেবা কিছুই বাড়েনি। সেবার মান বাড়লে মানুষ আবার নদীপথে ফিরবে।”
শিক্ষক ও লেখক আইরিন সুলতানা লিমা বলেন, “নৌপথে এখন সড়কের তুলনায় বেশি সময় লাগে। তাই দ্রুতগামী লঞ্চ চালু করা সময়ের দাবি।”
ব্যবসায়ী আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, “সেবা উন্নত করে যৌক্তিক ভাড়া নিলে মানুষ লঞ্চে ফিরবে। একসময় লঞ্চ ভ্রমণই ছিল প্রথম পছন্দ।”
চেয়ারম্যানঘাট এলাকার ব্যবসায়ী এ ওয়াই এম জাকারিয়া বলেন, “যাত্রীসেবার দুরবস্থার কারণে যাত্রী কমেছে। এখন দ্রুতগতির লঞ্চ এলেও তা যথেষ্ট নাও হতে পারে। তাছাড়া লঞ্চঘাট ব্যবস্থাপনা নিয়েও ভাবা দরকার, যাত্রীরা সেখানে নানা বিড়ম্বনায় পড়েন।”
চিঠিতে জেলা প্রশাসক আরও উল্লেখ করেন, বরিশাল বিভাগ থেকে ঢাকাগামী ও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ জাহাজ চলাচলের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে চাঁদপুর নৌবন্দর ব্যবহৃত হয়। তাই এই রুটে আধুনিক ও দ্রুত লঞ্চ নিশ্চিত করা জরুরি।
তিনি বলেন, “বর্তমানে যেসব লঞ্চ ৩ ঘণ্টায় পৌঁছায়, তা সদিচ্ছা থাকলে ২.৫ ঘণ্টায় পৌঁছানো সম্ভব। পুরনো লঞ্চগুলো সংস্কার ও আধুনিকায়ন করে যাত্রীবান্ধব সেবা নিশ্চিত করা গেলে আবারও এই রুট জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।”
জেলা প্রশাসকের মতে, শুধু চাঁদপুর নয়, শরীয়তপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার অনেক যাত্রী এই নৌরুটে চলাচল করেন। সড়কে চাপ কমাতে ও যাত্রীদের বিকল্প সুযোগ দিতে হলে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অন্যথায় যাত্রীসংখ্যা হ্রাস পেলে ভবিষ্যতে লঞ্চ চলাচলই বন্ধ হয়ে যেতে পারে।



