
বাংলা রিডার ডেস্ক
জাতীয় দলের হয়ে আর্জেন্টিনার মাটিতে আর কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলবেন না লিওনেল মেসি। শুক্রবার ভোরে (বাংলাদেশ সময়) বুয়েন্স আইরেসের মনুমেন্তাল স্টেডিয়ামে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচটি ছিল ঘরের মাঠে তার শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ। সেই ম্যাচে জোড়া গোল করে দলকে ৩-০ ব্যবধানে জয় এনে দেন তিনি।
ম্যাচের একমাত্র অন্য গোলটি করেন লাওতারো মার্টিনেজ। তবে পুরো ম্যাচজুড়ে কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন কেবল মেসি। গ্যালারিতে বসা হাজারো দর্শক গান আর করতালিতে বিদায় জানান ফুটবল ইতিহাসের এই জীবন্ত কিংবদন্তিকে।
ম্যাচ শেষে আবেগে ভেসে যান মেসি। হাত নাড়িয়ে সমর্থকদের বিদায় জানান তিনি। স্টেডিয়ামে উপস্থিত লাখো ভক্তের কণ্ঠে তখন শুধুই মেসিকে ঘিরে ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা আর আবেগের প্রকাশ।
মেসি বলেন “এই মাঠে অনেক আবেগ, অনেক স্মৃতি আছে আমার। আর্জেন্টিনার মানুষদের সামনে খেলতে পারা সবসময় আনন্দের। এভাবে শেষ করতে পারা আমার সবসময়কার স্বপ্ন ছিল।”
“আমি বার্সেলোনায় অনেক ভালোবাসা পেয়েছি, তবে স্বপ্ন ছিল নিজের দেশেও সেটা পাওয়ার। অনেক কথা হয়েছে বছর ধরে, তবে আমি ভালো দিকগুলোই মনে রাখবো। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি, শেষমেশ পেয়েছি। সবকিছুই ছিল দারুণ এক অভিজ্ঞতা। আজকের ম্যাচটি এখানে আমার শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ।”
ইতোমধ্যে ২০২৬ বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে আর্জেন্টিনা। ১৭ ম্যাচ শেষে তাদের পয়েন্ট ৩৮। তবে আসন্ন বিশ্বকাপে (যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় অনুষ্ঠিতব্য) মেসির অংশগ্রহণ এখনো নিশ্চিত নয়।
ইন্টার মিয়ামির হয়ে খেলা এই তারকা বলেন,”আমি আগেও বলেছি, সম্ভবত আর কোনো বিশ্বকাপে খেলবো না। বয়সের কারণে সেটা স্বাভাবিক। তবে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। প্রতিদিন যেভাবে কাটছে, সেভাবেই এগোচ্ছি। যখন উপভোগ করি, তখন খেলি। না করলে মাঠে থাকতে চাই না।”
“এই মৌসুম শেষ করব, এরপর প্রি-সিজন, তারপর বিশ্বকাপের ছয় মাস আগে সিদ্ধান্ত নেবো আমি কেমন অনুভব করছি। আশা করছি ভালো একটি মৌসুম কাটবে।”
২০০৬ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপে অভিষেক হয় মেসির। এরপর টানা পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। ২০১৪ সালে ফাইনালে উঠেও শিরোপা হাতছাড়া করেন, তবে ২০২২ সালে কাতারে সেই অপূর্ণতা ঘুচিয়ে শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন।
তিনি আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা খেলোয়াড়। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে দেশের হয়ে কোপা আমেরিকা, ফিনালিসিমা ও বিশ্বকাপ—সবকিছুই জিতেছেন।
ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল শুধুই একটি জয় নয়, বরং এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের আবেগঘন পরিসমাপ্তি। গ্যালারির দর্শক, সতীর্থ ও দেশের মাটিতে মেসির এই বিদায়ী মুহূর্ত ইতিহাস হয়ে থাকবে আর্জেন্টাইন ফুটবলের পাতায়।