নতুন কুঁড়ি ২০২৫: হারানো ঐতিহ্যের নতুন আলোয় প্রত্যাবর্তন

বাংলা রিডার ডেস্ক
“আমরা নতুন, আমরা কুঁড়ি, নিখিল বন নন্দনে…”—শিশু-কিশোরদের সবচেয়ে প্রিয় সংগীতগুলোর একটি দিয়ে শুরু হতো বিটিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘নতুন কুঁড়ি’। একসময় শুক্রবার মানেই ছিল টিভি পর্দায় নতুন কুঁড়ির প্রাণবন্ত পরিবেশ। ২০০৫ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া সেই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানটি ২০ বছর পর আবারও ফিরে আসছে নতুন রূপে, নতুন উদ্যোগে।

শুরুর গল্প
১৯৬৬ সালে পাকিস্তান টেলিভিশনে প্রচার শুরু হওয়া ‘নতুন কুঁড়ি’ স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সালে বিটিভিতে পুনরায় যাত্রা শুরু করে। এর পেছনে মূল ভূমিকায় ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোস্তফা মনোয়ার এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
অনুষ্ঠানটির নাম নেয়া হয়েছিল কবি গোলাম মোস্তফার ‘কিশোর’ কবিতার অনুপ্রেরণায়। লক্ষ্য ছিল—বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শিশু-কিশোরদের প্রতিভা খুঁজে বের করে জাতীয় মঞ্চে উপস্থাপন করা।

বহু তারকার শুরু এ মঞ্চ থেকে
নতুন কুঁড়ি থেকে উঠে এসেছেন কনক চাঁপা, সামিনা চৌধুরী, তারানা হালিম, তারিন জাহান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, মেহের আফরোজ শাওন, শুভ্র দেব, রুমানা রশিদ ঈশিতা, এবং আরও অনেক আজকের প্রতিষ্ঠিত শিল্পী।
তারা কেউ সংগীতে, কেউ অভিনয়ে, কেউবা নৃত্যে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রেখেছেন অসামান্য অবদান।

দীর্ঘ শূন্যতা
২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রচারিত হওয়ার পর ২০০৬ সালে অনুষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়, যা দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এক অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি করে। এরপর দুই দশকেও গড়ে ওঠেনি জাতীয় পর্যায়ের কোনো শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম।

‘নতুন কুঁড়ি ২০২৫’
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম সম্প্রতি ‘নতুন কুঁড়ি ২০২৫’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন।
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে এই আয়োজন প্রজন্মকে সৃজনশীল করে তুলবে। এটি কেবল অনুষ্ঠান নয়, এক নতুন যুগের সূচনা।” বিটিভির মহাপরিচালক মো. মাহবুবুল আলম বলেন, “নতুন কুঁড়ি এখন একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন। এটি প্রযুক্তি আসক্ত শিশুদের সাংস্কৃতিক চর্চায় ফিরিয়ে আনবে।”

বিস্তৃত আয়োজন :

দেশকে ভাগ করা হয়েছে ১৯টি অঞ্চলে। প্রতিটি অঞ্চলে হবে আঞ্চলিক বাছাইপর্ব। চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ঢাকায়। বয়সভিত্তিক দুই বিভাগ: ‘ক’ বিভাগ: ৬–১১ বছর, ‘খ’ বিভাগ: ১১–১৫ বছর, সর্বোচ্চ ৩টি বিষয়ে অংশ নেওয়ার সুযোগ

প্রতিযোগিতার বিভাগ: দেশাত্মবোধক গান, আধুনিক গান, রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীত, লোকসংগীত, হামদ-নাত, অভিনয়, আবৃত্তি, গল্প বলা, কৌতুক, সাধারণ নৃত্য, উচ্চাঙ্গ নৃত্য। প্রতিটি বিভাগেই থাকবে স্বনামধন্য বিচারক প্যানেল

সংগীতশিল্পী কনক চাঁপা বলেন,“১৯৭৮ সালে আমি নতুন কুঁড়িতে প্রথম হই। সেটিই ছিল আমার জীবনের বড় অর্জন। আজও সেই মুহূর্ত আমার জীবনের অন্যতম প্রিয় স্মৃতি।”
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে নস্টালজিয়ার ঢেউ। অনেক প্রাক্তন প্রতিযোগী লিখেছেন,“শৈশবের শুক্রবার মানেই ছিল নতুন কুঁড়ি।”“প্রথম মঞ্চে উঠার সাহসটা পেয়েছিলাম এই অনুষ্ঠান থেকেই।”

আত্মপ্রকাশের মঞ্চ
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন শিশুদের জন্য এমন জাতীয় সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম না থাকায় অনেক প্রতিভা হারিয়ে গেছে।
‘নতুন কুঁড়ি’র এই নতুন যাত্রা শুধু বিনোদনের আয়োজন নয়—এটি আত্মবিশ্বাস, জাতীয়তাবোধ এবং নেতৃত্ব গড়ে তোলার এক মহৎ উদ্যোগ।

‘নতুন কুঁড়ি ২০২৫’ কেবল একটি অনুষ্ঠান পুনরায় চালু হওয়ার ঘটনা নয়, এটি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পুনর্জন্ম।
প্রতিভা অন্বেষণের এই মঞ্চ নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন গড়ার স্থান হয়ে উঠুক—এই প্রত্যাশায় তাকিয়ে আছে পুরো দেশ। “নতুন কুঁড়ি” ফিরছে বলেই হয়তো শৈশবটাও একটু করে ফিরে আসছে আমাদের কাছে।

বিজ্ঞাপন

Recommended For You